ছােট, সহজে ইনস্টলযােগ্য ও কম ব্যয়ের মধ্যে নেটওয়ার্ক করার জন্য বাস টপােলজি ব্যবহার করা হয়।  বাস টপােলজিতে একটি মূল ক্যাবল সরাসরি চলে যায় এবং এর সাথে যুক্ত থাকে প্রতিটি কম্পিউটার। এখানে মূল ক্যাবল যেটি একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলে যায় তাকে বলা হয় বাস (Bus) টপোলজি। নিম্নে একটি বাস টপোলজির চিত্র দেখানো হলো।

Bus Topology

সাধারণ বাস নেটওয়ার্কে সাধারনত একটিমাত্র ক্যাবল কোনাে প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যেমন রিপিটার বা এমপ্লিফায়ার, ছাড়া ব্যবহৃত হয় যাতে এক কম্পিউটারের সিগন্যাল আরেক কম্পিউটারে সরাসরি যেতে পারে। তাই এই টপােলজিকে প্যাসিভ টপােলজি (Passive Topology) বলা হয়। যখন একটি কম্পিউটার অন্য কোনাে কম্পিউটারের উদ্দেশ্যে মেসেজ পাঠায় তখন সেই মেসেজ সিগন্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে যুক্ত থাকা প্রত্যেকটি কম্পিউটারের নিকট পৌছায়। যে কম্পিউটারের উদ্দেশ্যে মেসেস পাঠানাে হয় কেবল মাত্র সেই কম্পিউটারই মেসেজটি গ্রহণ করে আর অন্যরা সেটির দিকে কোনাে নজর না দিয়েই সেই প্যাকেটকে বাতিল করে দেয়।

বাস টপােলজিতে একসাথে কেবলমাত্র একটি কম্পিউটার মেসেজ পাঠাতে পারে। কোনাে কম্পিউটার যখন মেসেজ পাঠাচ্ছে তখন অন্যদের অপেক্ষা করতে হয় তার পাঠানাে শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তার মেসেজ পাঠানাে শেষ হলেই অন্য কম্পিউটার মেসেজ পাঠাতে পারে। তাই এ নেটওয়ার্কে কম্পিউটারের সংখ্যা বেড়ে গেলে নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সের অবনতি ঘটে। অবশ্য এ সমস্যা স্টার ও রিং টপােলজিতেও ঘটে।

বাস নেটওয়ার্কে টার্মিনেশন (Termination) একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বাস একটি প্যাসিভ টপােলাজি হওয়ার কারণে এর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত সিগন্যাল অবাধে যেতে পারে। যদি ক্যাবলের প্রান্তকে টার্মিনেট করা না হয় তাহলে দেখা যাবে সিগন্যাল একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাচ্ছে কিন্তু সেখান থেকে ধাক্কা খেয়ে আবার ফেরত আসছে। এভাবে ক্রমাগত ইলেকট্রিক সিগন্যাল যাতায়াত করতে থাকবে এবং এর পরের সিগন্যালের সাথে মিশে ভজঘট পাকাবে। প্রান্ত থেকে সিগন্যাল ফিরে আসাকে বলা হয় রিংগিং (Ringing)। এই রিংগিং যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য ক্যাবলের প্রান্তে টার্মিনেটর নামের একটি রােধক ব্যবহার করা হয়। এই টার্মিনেটর ইলেকট্রিক্যাল সিগনালকে নিঃশেষ করে দেয়, ফলে তা প্রতিফলিত হতে পারে না। প্রান্তে টার্মিনেটর ব্যবহার করা না হলে সমস্যা হয়। বাস টপােলজি নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দিলে আগে দেখে নিতে হবে বাসের দু’প্রান্ত ঠিকমতাে টার্মিনেট করা হয়েছে কি না।


বাস টপােলজির সুবিধাঃ

  • ছােটখাটো নেটওয়ার্কের জন্য এটি খুবই সহজ এবং স্বল্পব্যয়। সহজে ব্যবহার করা যায় এবং সহজে বােধগম্য একটি টপােলজি।
  • বাস নেটওয়ার্কে সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের ক্যাবল লাগে। এর ফলে ব্যয় কম হয়।
  • বাস নেটওয়ার্ককে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে বাসের সাথে বিএনসি ব্যারেল কানেক্টর ব্যবহার করে আরেকটি বাসের সাথে সংযােগ করে দিয়ে। এর ফলে অধিক সংখ্যক কম্পিউটার নেটওয়ার্কে যােগ দিতে পারে।
  • বাসকে সম্প্রসারণ এবং সিগন্যাল পারফরম্যান্স সমুন্নত রাখতে রিপিটার ব্যবহার করা  হয়। রিপিটার ইলেকট্রিক সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করে।

বাস নেটওয়ার্কের অসুবিধাঃ

  • নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পরিমাণ বেশি হলে পারফরম্যান্স খুব খারাপ হতে দেখা যায়। একইসময়ে কেবল একটিমাত্র কম্পিউটার মেসেজ পাঠাতে পারে। তার মেসেজ পাঠানাে শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যদের অপেক্ষা করতে হয়। কম্পিউটারের সংখ্যা বেড়ে গেলে এ সমস্যা ব্যাপক হয়ে উঠতে পারে।
  • প্রতিটি ব্যারেল কানেক্টর ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালকে দূর্বল করে দেয়। তাই বেশি সংখ্যক ব্যারেল কানেক্টর ব্যবহার করে বাসকে সম্প্রসারণ করা হলে তাতে নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্স খারাপ হয়।
  • বাস নেটওয়ার্ক ট্রাবলশুটিং করা কষ্টকর। যদি বাসের কোনােখানে ক্যাবল ব্রেক করে তাহলে সেটি সহজে বের করা যায় না। বাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে পুরাে নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে যায়। তখন একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যােগাযােগ করতে পারে না। এই ক্যাবল ব্রেক বের করার জন্য বাসের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত টেস্ট করতে হয় ক্যাবল টেস্টার বা অন্য কোনাে ডিভাইস দিয়ে।
বাস টপােলজি ব্যবহার করে গড়ে ওঠা সবচেয়ে একটি জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক হলাে ১০বেজ২ (10Base2)


Post a Comment

Previous Post Next Post