Learn techbd networking bangla
আজকের দিনের অপটিক ফাইবার ক্যাবলের প্রধান উপাদান হলাে গ্লাস বা কাচ। তামার তারের চেয়ে কাচকে মিডিয়া হিসেবে ব্যবহারের বহুবিধ সুবিধা আছে। সে তুলনায় অসুবিধা অসুবিধা খুবই কম । এর ব্যয়ের কারণে বেশিরভাগ সময়ই নেটওয়ার্ক ব্যাকবােনে ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। তবে লােকাল এড়িয়া নেটওয়ার্কেও এর ব্যবহার দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আগে আমরা জেনেছি তামার তারের একটি প্রধান অসুবিধা হলাে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফের্যান্স বা EMI। এই EMI- এর কারণে ঘটতে পারে ইভসড্রপিং। কাচকে মিডিয়া হিসেবে ব্যবহারের বড় সুবিধা হলো এই যে, এতে EMI নেই। সে কারণে ডাটা সিগন্যাল পরিবর্তিত হওয়ার ভয়ও নেই। তবে কাচের ভেতর আলােক সংকেতের মাধ্যমে ডাটা প্রবাহিত হয় বলে এতে অন্য ধরনের ইন্টারফের্যান্স ঘটতে পারে, যাকে বলা হয় ক্রোমাটিক ডিসপার্সন (Chromatic Dispersion)। কাচের মধ্য দিয়ে আলােক সংকেতরূপে ডাটা প্রবাহিত হয় বলে এর গতি অনেক বেশি হয়। ফাইবার অপটিকের মধ্যে আলােক সংকেত দু’ভাবে যেতে পারে, লেজার (Laser) এবং লেড (Light-Emitting Diode)। ফাইবার অপটিক ক্যাবলে লেজার কাংখিত হলেও বেশিরভাগ লেড ব্যবহৃত হয়। কারণ লেজার ডিভাইসের চেয়ে লেড ডিভাইসগুলির ব্যয় কম, টেকেও অনেক বেশি।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলে কেন্দ্রের মূল তারটি গড়ে ওঠে সিলিকা, কাচ অথবা প্লাস্টিক দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে আলােক সংকেতরূপে ডাটা পরিবাহিত হতে পারে সিগন্যাল লস ছাড়াই। একটি মাল্টিমােড ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ডায়ামিটার হলাে ১২৫ মাইক্রন যা মানুষের দু’টো চুলের সমান মােটা।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল বিভিন্ন আকারের হতে পারে। এটি নির্ভর করে এর কোর ফাইবার অপটিকের আকারের উপর। সচরাচর ব্যবহৃত ফাইবার অপটিক ক্যাবলের কোর ফাইবারের সাইজ হয় ৬২.৫/১২৫ মাইক্রন। এখানে ৬২.৫ মাইক্রন হলাে কোর ফাইবারের ডায়ামিটার, আর ১২৫ হলাে ক্ল্যাডিঙের সাইজ। এ ধরনের ফাইবারকে বলা হয় মাল্টিমােড (Multimode) ফাইবার অপটিক ক্যাবল। মাল্টিমােড ফাইবারে একইসাথে একাধিক আলােক সংকেত প্রেরণের পথ থাকে এবং এসব পথ দিয়ে সবকটি সিগন্যাল একইসাথে গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে। এর ফলে গ্রহীতার কাছে মনে হয় একটিমাত্র আলােক তরঙ্গের মাধ্যমে পুরাে ডাটা এসেছে। এটি লেড (light-emitting diode) ব্যবহার করতে পারে বলে মাল্টিমােড ফাইবারে খরচ কম হয়।
সিঙ্গলমােড (single-mode) ফাইবার ব্যবহার করা হয় দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য। সিঙ্গল ফাইবারে একসাথে কেবল একটি আলােক সংকেত প্রেরণের পথ থাকে এবং সাধারণত লেজার সিগন্যালিঙের জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ফাইবার অপটিক ক্যাবলের কোর ফাইবারের ডায়ামিটার হলাে ৮/১২৫ মাইক্রন। কোনাে রিপিটার ছাড়াই সিঙ্গল- মােড ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে ৩ মাইল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে ইথারনেট, ১০বেজএফ (10BaseF), FDDI, অপটিক্যাল টোকেন রিং ও ATM নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য এ ধরনের ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
নিম্নে সিঙ্গল- মােড ও মাল্টিমােড ফাইবারের ব্যবহার দেখানাে হলাে।
কোন প্রকারের ক্যাবল |
কোরের সাইজ |
বৈশিষ্ট্য/ব্যবহার |
সিঙ্গল-মোড ফাইবাল |
৮/১২৫ মাইক্রন |
উচ্চগতি সরকার পড়ে এমন নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা হয়। এতে একসাথে কেবল একটি ট্রান্সমিশন ঘটতে পারে |
মাল্টিমোড ফাইবার |
62.5/125 মাইক্রন |
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফাইবার অপটিক ক্যাবল। বেশিরভাগ নেটওয়ার্ক এপ্লিকেশনের উপযোগী। একইসাথে একাধিক ট্রান্সমিশন ঘটাতে পারে। |
ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহারের জন্য বিশেষ ধরনের নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড দরকার পড়বে যাতে থাকবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল কানেক্টর। ফাইবার অপটিক ক্যাবলের একপ্রান্ত কানেক্টরের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক এডাপ্টারের সাথে যুক্ত থাকে, আরেক প্রান্ত অন্য কোন স্লাইসিং ডিভাইসের সাথে যুক্ত হয়। মনে রাখা দরকার UTP কিংবা কোএক্সিয়াল ক্যাবলের মতাে ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে অত সহজে স্লাইস বা টুকরাে করা যায় না। এর স্লাইসিঙের জন্য দরকার পড়ে ইলেকট্রিক ফিউশন কিংবা কেমিক্যাল এপােক্সি।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
- ফাইবার অপটিক ক্যাবলের দাম UTP, STP ও কোএক্সিয়ালের ক্যাবলের চেয়ে বেশি। তবে বর্তমানে এর দাম কমছে এবং ব্যবহারও বাড়ছে। এই ক্যাবলের দামের সাথে সাথে আছে এর সাথে ব্যবহৃত অন্যান্য ইকুইপমেন্টের ব্যয়। আবার মাল্টিমােড ফাইবার অপটিকের তুলনায় সিঙ্গল- মােড ফাইবার অপটিক ক্যাবলে ইনস্টলেশন ও অন্যান্য ব্যয় অধিক।
- ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইনস্টল করা বেশ কঠিন। প্রতিটি কানেকশন এবং স্লাইস পয়েন্ট এমনভাবে স্থাপন করা দরকার যাতে আলােক পথ রুদ্ধ না হয়। তাছাড়া ক্যাবলকে কী পরিমাণ বাঁকানাে যাবে তারও নিয়ম আছে। একে প্রয়ােজনমতাে বাঁকানাে যায় না বলে ইনস্টলেশন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
- ফাইবার অপটিক ক্যাবলের প্রধান সুবিধা হলাে এতে অনেক উচ্চগতি পাওয়া যায়। বর্তমানে এতে ১০০ এমবিপিএস থেকে ২ জিবিপিএস বা ২ গিগাবিট/সে. গতি পাওয়া যেতে পারে। কয়েক কিলােমিটার ব্যাপী সাধারণ মাল্টিমােড ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করলেই ১০০ এমবিপিএস স্পীড পাওয়া যায়।
- টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের মতােই ফাইবার অপটিক ক্যাবলে নােডের সংখ্যা নির্ভর করে হাবের পাের্টের উপর। তবে ইথারনেট ব্যবহার করা হলে একই কলিশন (ccollission) ডােমেইনে ৭৫ নােডের নিয়ম মেনে চলা দরকার। অন্যান্য ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক, যেমন FDDI নেটওয়ার্কে ব্যাকবােনে ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করা হয়, ল্যানের ভেতর থাকে STP। তাই নেটওয়ার্ক ডিভাইসের সংখ্যা নিয়ে চিন্তা করার দরকার পড়ে না।
- ইলেকট্রিসিটির মতাে আলােক সংকেত বাইরে ছড়িয়ে পড়ে না বলে এতে এটেনুয়েশন নেই বললেই চলে। এটেনুয়েশন না থাকায় এর মাঝ দিয়ে সিগন্যাল অনেক দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এটেনুয়েশন না থাকলেও ফাইবার অপটিক ক্যাবলে আরেকটি অসুবিধা রয়েছে যাকে বলা হয় ক্রোমাটিক ডিসপারসন (chromatic dispersion)। বিভিন্ন তরঙ্গের আলােক সংকেত একই ক্যাবলের মধ্য দিয়ে পরিবাহিত হওয়ার সময় কিছু কিছু তরঙ্গ এদিক ওদিক হতে পারে। এটিই গােলমাল তৈরি করে। এই একই পদ্ধতিতে রঙধনুর সৃষ্টি হয়। অনেক দূরত্ব অতিক্রম করতে হলে একটি পর্যায়ে এসে এক আলােকতরঙ্গ আরেকটির সাথে মিশে যেতে পারে এবং ডাটা হারিয়ে যেতে পারে। সেজন্য দীর্ঘ দূরত্বের জন্য ব্যবহার করা হয় সিঙ্গল- মােড ফাইবার অপটিক। সিঙ্গল- মােড ফাইবার অপটিকে একসাথে কেবল একটি আলােকতরঙ্গ প্রবাহিত হতে পারে বলে এর মধ্য দিয়ে অনেক দূর সিগন্যাল যেতে পারে।
- ফাইবার অপটিক ক্যাবলে EMI নেই বলে এটি এমন সব স্থানে ব্যবহার করা যায় যেখানে অনেক ইলেট্রিক্যাল ইন্টারফেরান্স বর্তমান। যেমন কোনাে ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কশপের মাঝে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হলে একমাত্র ফাইবার অপটিকই দিতে পারে EMI থেকে মুক্তি। EMI না থাকার কারণে এটি ইভসড্রপিঙের সমস্যা থেকেও মুক্ত।
Post a Comment