Learn techbd networking bangla
রেডিওতে যেমন সিগন্যাল ট্রান্সমিট করা হয় ঠিক সেভাবেই নেটওয়ার্কের ডাটা ট্রান্সমিট করা হয় রেডিও ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে প্রতিটি কম্পিউটার একই ফ্রিকোয়েন্সিতে সেট করা থাকে যাতে তারা অন্য কম্পিউটার কর্তৃক পাঠানাে সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারে। রেডিও ওয়েভের ফ্রিকোয়েন্সি ১০ কিলােহার্টজ (KHz) থেকে ১ গিগাহার্টজ (Glz) হয়ে থাকে।
এই রেঞ্জের মধ্যকার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামকে বলা হয় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF)। বেশিরভাগ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিই নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ ইচ্ছে করলেই আপনি এসব ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে রেডিও ট্রান্সমিশন করতে পারবেন না। এর জন্য সরকারি অনুমতি দরকার হবে। কোনাে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে সিগন্যাল ট্রান্সমিট করার জন্য সরকারের কাছ থেকে আপনাকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। লাইসেন্স নিলে সেই ফ্রিকোয়েন্সি আপনার জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং আইনত অন্য কেউ সেই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারবে না। অন্য কেউ সেই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ট্রান্সমিশন করলে দুই নেটওয়ার্কই কাজ করবে না।
অনিয়ন্ত্রিত রেডিও ট্রান্সমিশন ইকুইপমেন্টের মাধ্যমে আপনি অনিয়ন্ত্রিত রেডি ফ্রিকোয়েন্সিতে ডাটা ট্রান্সমিট করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অসুবিধা হলাে যে ওই একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে অন্য কেউ সেটি। ট্রান্সমিট করতে পারে। যদি পাশাপাশি দুটি নেটওয়ার্ক একই ফ্রিকোয়েন্সিতে সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে তাহলে সমস্যা হবে। এ সমস্যার সমাধানে অনিয়ন্ত্রিত রেডিও ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসের ট্রান্সমিশন আওতা অল্প দূরত্বের মধ্যেই রাখা হয়।
RF সিগন্যালের শক্তি নির্ধারিত হয় এন্টেনা এবং ট্রান্সসিভারের মাধ্যমে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের জন্য তিন ধরনের ট্রান্সমিশন ব্যবহৃত হয়:
- লো পাওয়ার সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি
- হাই পাওয়ার সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি
- স্প্রেড স্পেকট্রম
লাে পাওয়ার সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি বা ন্যারাে ব্যান্ড ট্রান্সমিশনঃ
লাে-পাওয়ার সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশন ন্যারাে ব্যান্ড (Narrow Band) নামেও পরিচিত। এটি একটি অনিয়ন্ত্রিত ফ্রিকোয়েন্সি এবং অল্প দূরত্বের মধ্যে ট্রান্সমিশনের জন্য উপযোগী। এর ফ্রিকোয়েন্সি হলো ৯০২-৯২৮ মেগাহার্টজ, ২.৪ গিগাহার্টজ এবং ৫.৭২- ৫.৮৫ গিগাহার্টজ। এই ট্রান্সমিশনে সিগন্যাল সর্বোচ্চ ৭০ মিটার বা ২৩০ ফুট পর্যন্ত যেতে পারে। তবে বেশিরভাগ লাে ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশন ইকুইপমেন্টের আওতা হলাে ২০৩০ মিটার। অন্যান্য সিগন্যাল এ ধরনের ট্রান্সমিশনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং এই ফ্রিকোয়েন্সিতে ট্রান্সমিট করা সিগন্যাল যে কেউ রিসিভ করতে পারে তাদের কম্পিউটারে যথার্থ ফ্রিকোয়েন্সি টিউন করে। এর ফলে ডাটার নিরাপত্তা মােটেই থাকে না।
ন্যারাে ব্যান্ড রেডিও ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ-
- অন্যান্য ওয়্যারলেস মিডিয়ার চেয়ে ন্যারাে ব্যান্ড ট্রান্সমিশন সিস্টেমের খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
- বেশিরভাগ ন্যারাে ব্যান্ড ট্রান্সমিশন ইকুইপমেন্ট ইনস্টল করা বেশ সহজ। এর এন্টেনা উপযুক্ত
- ফ্রিকোয়েন্সিতে সেট করার জন্যও খুব বেশি বেগ পেতে হয় না।
- ন্যারাে ব্যান্ড রেডিও ট্রান্সমিশনে গতি পাওয়া যেতে পারে ১ থেকে ১০ এমবিপিএস।
- এই নেটওয়ার্কে ইথারনেট নেটওয়ার্কের মতােই সর্বোচ্চ কটি নােড রাখা যাবে সে রীতি মেনে চলা দরকার।
- ন্যারাে ব্যান্ড ট্রান্সমিশনও এটেনুয়েশনে ভােগে। কারণ এর সিগন্যাল খুবই কম শক্তির।
- ন্যারাে ব্যান্ড ট্রান্সমিশনে ইএমআই প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে আশেপাশে যদি ইলেকট্রিক মােটর কিংবা এ ধরনের কোনাে যন্ত্র থাকে।
হাই-পাওয়ার সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনঃ
হাই পাওয়ার সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনে অনেক বেশি জায়গা পর্যন্ত সিগন্যাল পাঠানাে যায়। তবে এ ধরনের ট্রান্সমিশন হলাে লাইন অব সাইট অর্থাৎ কোনাে কম্পিউটার উৎস থেকে সরাসরি দেখা গেলেই কেবল সে ওই সিগন্যাল রিসিভ করতে পারবে। তবে আয়ন স্তরে প্রতিফলিত হয়ে অন্যত্রও এটি যেতে পারে। এতে ট্রান্সমিশন ফ্রিকোয়েন্সি ন্যারাে ব্যান্ডের মতােই, তবে এটি অনেক বিস্তৃত জায়গায় যেতে পারে। এ ধরনের রেডিও ট্রান্সমিশন মােবাইল কম্পিউটিঙের উপযােগী।
হাই পাওয়ার সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ-
- এর ট্রান্সসিভারের দাম কম হলেও এন্টেনা ও অন্যান্য ইকুইপমেন্টের কারণে হাইপাওয়ারড সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনের খরচ বেশি পড়ে।
- এর ইনস্টলেশন জটিল এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দরকার পড়ে।
- ব্যান্ডউডথ পাওয়া যায় ১ থেকে ১০ এমবিপিএস।
- ইথারনেট নেটওয়ার্কের মতােই সর্বোচ্চ নােড সংখ্যা হতে পারে।
- এ ট্রান্সমিশনে এটেনুয়েশন অনেক কম হয়। রিপিটার ব্যবহার করে সিগন্যালকে অনেক দূর পর্যন্ত পাঠানাে যায়।
- ন্যারাে ব্যান্ডের মতােই এখানেও EMI প্রভাব ফেলে এবং ইভসড্রপিঙের সমস্যা থাকে।
স্প্রেড স্পেকট্রাম রেডিও ট্রান্সমিশনঃ
সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহৃত একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয় স্প্রেড স্পেকট্রাম রেডিও ট্রান্সমিশনে। তবে সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশন আর স্প্রেড স্পেকট্রামের পার্থক্য হলাে এই যে সিঙ্গল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনে কেবল একটি ফ্রিকোয়েন্সিই ব্যবহৃত হয়, আর স্প্রেড স্পেকট্রাম ট্রান্সমিশনে একসাথে একাধিক ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হতে পারে। এর জন্য দু'ধরনের ম্যুলেশন ব্যবহৃত হয়: ডিরেক্ট সিকোয়েন্স মডুলেশন ও ফ্রিকোয়েন্সি হপিং।
ডিরেক্ট ফ্রিকোয়েন্সি মড্যুলেশন সচরাচর ব্যবহৃত হয়। এতে ডাটাকে বিভিন্ন অংশে, যাকে বলা হয় চিপ (Chip), বিভক্ত করে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে পাঠানাে হয়। ইভসড্রপিং প্রতিরােধ করার জন্য বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে ফলস সিগন্যালও পাঠানো হয়। রিসিভারের জানা থাকে কোন কোন ফ্রিকোয়েন্সি সঠিক, সে কারণে সে আসল ফ্রিকোয়েন্সি থেকে চিপগুলিকে সংগ্রহ করে ডাটা পুনর্গঠন করতে পারে বর্তমানে 900 মেগাহার্টস ডিরেক্ট সিকোয়েন্স ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যান্ডউডথ পাওয়া যায় 2 থেকে 6 এমবিপিএস।
এ পদ্ধতিতে একটি সিগন্যালকে আরেকটি সিগন্যাল প্রভাবিত করতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি, সব কটি সিগন্যাল সংগ্রহ করে ডাটা পুনর্গঠন কোনাে ইভসড্রপারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
ফ্রিকোয়েন্সি হপিঙে খুব দ্রুত সিগন্যাল কয়েকটি ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তিত হতে থাকে। এতে ট্রান্সসিভার এবং রিসিভার দুটোই খুব ভালভাবে সিনক্রোনাইজড থাকা দরকার।
স্পেড স্পেকট্রাম রেডিও ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
- অন্যান্য ওয়্যারলেস মিডিয়ার চেয়ে এখানে খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
- ব্যবহৃত ইকুইপমেন্টের উপর ভিত্তি করে ইনস্টলেশন মােটামুটি কঠিন হতে পারে।
- কম ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হয় বলে প্রেড স্পেকট্রাম ট্রান্সমিশনে এটেনুয়েশন বেশি।
- এতে EMI প্রতিরােধ ব্যবস্থা নেই, তবে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে সিগন্যাল ট্রান্সমিট হয় বলে ইভসড্রপিং ঘটে না।
Post a Comment